শুক্রবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:১৮ পূর্বাহ্ন
রবিবার দুপুরে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে এই চার্জ গঠন করা হয়।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এডভোকেট ফরিদুল আলম জানিয়েছেন, আজ রবিবার রোহিঙ্গা নেতা মুহিব্বুল্লাহ হত্যা মামলার নির্ধারিত তারিখ ধার্য ছিল। এই হত্যা মামলায় পুলিশের দেয়া চার্জশিট নিয়ে আদালত শুনানি করেন। শুনানি শেষে আদালত মুহিব্বুল্লাহ হত্যা মামলায় ২৯ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন।
পিপি ফরিদ আরও জানান, চার্জ গঠনের মাধ্যমে আলোচিত রোহিঙ্গা নেতা মুহিব্বুল্লাহ হত্যা মামলার বিচারিক কার্যক্রম আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হলো। চার্জ গঠনের সময় এই মামলার ২৯ আসামির মধ্যে ১৫ জন আদালতে হাজির ছিল। বাকি ১৪ জন আসামি পলাতক রয়েছে। মামলায় মোট ৩১ জনকে স্বাক্ষী করা হয়েছে। মামলার বিচারিক কার্যক্রমের পরবর্তী তারিখে স্বাক্ষীদের স্বাক্ষগ্রহন করা হবে। উক্ত মামলায় উখিয়া থানা পুলিশ গত ১৩ জুন আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছিলেন।
উখিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী জানিয়েছেন গ্রেপ্তার ১৫ জনের মধ্যে ৪ জন ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। একই সঙ্গে ৩ জন স্বাক্ষীও ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। এ হত্যাকাণ্ডে ৩৬ জনকে জড়িত হিসেবে সনাক্ত করা হলেও ৭ জনের ঠিকানা ও অবস্থান সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি ফলে ২৯ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।
মুহিবুল্লাহ আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) চেয়ারম্যান ছিলেন। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে নেওয়া নানা উদ্যোগে তার ভূমিকা ছিল।
গত ২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে উখিয়ার লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ডি ব্লকে আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস (এআরএসপিএইচ) সংগঠনের কার্যালয়ে বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত হন মুহিবুল্লাহ।
এ ঘটনায় ৩০ সেপ্টেম্বর মুহিববুল্লাহর ছোট ভাই হাবিবুল্লাহ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পান উখিয়া থানার ওসি-তদন্ত সালাহ উদ্দিন। তদন্ত শেষে গত ৩০ জুন অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেন পুলিশ।
গত ২০১৭ সালে তিনি বনে যান রোহিঙ্গাদের গুরুত্বপূর্ণ নেতা। সে সময় কয়েক লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিলে তাদের যোগাযোগে ভূমিকা রাখতে থাকেন নিয়মিত। ফলে বিদেশিদের কাছে আগে থেকে পরিচিত পান। মুহিবুল্লাহ কয়েক দফায় সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করেন। তার উত্থানে সহায়ক হয় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ২০১৮ সালে ইউএনএইচসিআরকে সংযুক্ত করার ঘটনায়। ইংরেজি ভাষা জানা ও রোহিঙ্গাদের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের দক্ষতা মুহিবুল্লাহকে ধীরে ধীরে বিদেশিদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে। জাতিসংঘ মহাসচিবসহ বিদেশি প্রতিনিধিরা যখনই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গেছেন, তাদের প্রত্যেকের সঙ্গেই রোহিঙ্গা প্রতিনিধি হিসেবে মুহিবুল্লাহ যোগ হয়েছেন। তার সঙ্গীদেরকেও প্রতিনিধি করেন।
মূলত বিদেশি সংস্থা ও সংগঠনগুলো দেশে ফেরার বিষয়ে যখন রোহিঙ্গাদের বক্তব্য জানার চেষ্টা করেছে তখনই মুহিবুল্লাহর সংগঠন এআরএসপিএইচ ভিন্ন কাজ করেছে। তারা ক্যাম্পে নানা প্রচারনা চালিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করেন এবং প্রত্যাবাসনে বাধার চেষ্টা চালিয়ে যান। কয়েক দফায় বিক্ষোভের আয়োজন করেন।মুহিবুল্লাহ এক পর্যায়ে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিবকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সংলাপের প্রস্তাব দেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ১৭ দেশের যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ২৭ প্রতিনিধি সাক্ষাৎ করেছিলেন সেখানেও যোগ দিয়েছিলেন মুহিবুল্লাহ।
ভয়েস/আআ